ঐক্য সরকার’ গঠনের ইঙ্গিত দিয়ে নওয়াজ বলেছেন, এখন সব রাজনৈতিক দলের একসঙ্গে এসে সরকার গঠন করা এবং পাকিস্তানকে সংকট থেকে টেনে বের করা প্রয়োজন।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারান্তরীণ ইমরান খানের সমর্থিত প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর সঙ্গে আসনসংখ্যার ব্যবধান বাড়িয়েই চলেছেন। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ২৩৬ টি আসনের ফলে ইমরানের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন এর চেয়ে বড় ব্যবধানে স্পষ্ট এগিয়ে রয়েছে। তবু নির্বাচনে জয় দাবি করে সরকার গঠনের চেষ্টা শুরু করেছেন নওয়াজ।
শুক্রবার রাতে এ খবর লেখা পর্যন্ত আল-জাজিরার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯৭ টি আসনে জয় পেয়েছে। আর নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল-এন) প্রার্থীরা পেয়েছে ৬৬ টি আসন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তুলনায় স্পষ্ট ব্যবধানে পিছিয়ে থাকলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ বলেছেন, সাধারণ নির্বাচনে তার দল ‘একক বৃহত্তম দল’ হিসেবে উঠে এসেছে।
লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে শরিফ বলেন, “পাকিস্তান মুসলিম লীগ আজ নির্বাচনের পর একক বৃহত্তম দল। দেশকে সংকট থেকে বের করে আনা আমাদের কর্তব্য।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সব দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ম্যান্ডেটকে সম্মান করি। আমরা তাদেরকে আমাদের সঙ্গে বসা এবং খুঁড়িয়ে চলা এই জাতিকে আবার শক্ত পায়ে দাঁড় করাতে সাহায্য করার আহ্বান জানাই।”
ঐক্য সরকার গঠনের ইঙ্গিত দিয়ে নওয়াজ বলেন, “এখন সব রাজনৈতিক দলের একসঙ্গে এসে সরকার গঠন করা এবং পাকিস্তানকে সংকট থেকে টেনে বের করা প্রয়োজন। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করলেই পাকিস্তান সংকট থেকে বেরিয়ে আসবে।”
পিএমএল-এন একক দল হিসেবে সরকার গঠনের অবস্থানে নেই সেকথা মেনে নিয়ে নওয়াজ তার সাবেক জোট শরিকদের একসঙ্গে বসে ঐক্য সরকার গঠনের আহ্বান জানান।
নওয়াজ বলেন, তিনি শেহবাজ শরিফকে শুক্রবার রাতেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। একটি জোট সরকার গঠনের জন্য তাকে আসিফ আলি জারদারি, মাওলানা ফজলুর রহমান ও খালিদ মকবুল সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন।
ওদিকে, এই প্রস্তাবের পর রাতেই পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলি জারদারি লাহোরে পৌঁছেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার গঠন নিয়ে পিএমএল-এন নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইমরান খান জেলে থাকার কারণে নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারায় এখন নওয়াজ শরিফই প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য পছন্দের ব্যক্তি হবেন সেটি একরকম পরিষ্কার।
ইমরান খানের দল পিটিআই বলেছে, তারা নির্বাচনের ফল নিয়ে ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে কথা বলবে এবং ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করবে। পিটিআই স্যোশাল মিডিয়ায় নওয়াজ শরিফের দলের বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ করেছে।
নওয়াজ তার দলকে একক বৃহত্তম দাবি করে ‘নির্লজ্জভাবে’ কথা বলছেন বলে নিন্দা করেছে পিটিআই। তারা বলছে, শরিফ ভোটে কারচুপি করেছেন। এটি সহ্য করা হবে না।
পাকিস্তানের জটিল রাজনৈতিক ব্যবস্থায় স্বতন্ত্ররা নিজেরা সরকার গঠন করতে পারে না। দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রিজার্ভ কিছু আসনও আছে। যেসব আসন বিভিন্ন দলকে তাদের জয়ের ভিত্তিতে বরাদ্দ করা হবে।
তবে নির্বাচনের পর স্বতন্ত্র সদস্যদের তাদের ইচ্ছামত কোনও দলে যোগ দেওয়ার পথ থাকবে। ইমরানের দলকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করায় দলটির সমর্থকরা স্বতন্ত্র হিসাবে লড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি জোট সরকার হলে সে সরকারকে বহু ধরনের চ্যালেঞ্জই মোকাবেলা করতে হবে। তাছাড়া, জোট সরকার দুর্বল এবং অস্থিতিশীল হবে…আর সেনাবাহিনী বড় ধরনের পরাজয়ের সম্মুখীন হবে বলেই মনে করেন আফগানিস্তান ও পাকিস্তান বিষয়ক বিশ্লেষক মারভিন।